হৃদয় মাহমুদ রানা,নিজস্ব প্রতিবেদক:
মানিকগঞ্জের সিংগাইরে দেবর ভাবীর পরকিয়ার সম্পর্কের জেরে প্রবাসী উজ্জল মিয়া (৩০)’কে হত্যা করে স্থানীয় ধলেশ্বরী নদীর কচুরিপানার মধ্যে মাটিভর্তি প্লাস্টিকের ড্রামের সাথে রশি দিয়ে বেঁধে রাখে প্রবাসী উজ্জলের স্ত্রী ও আপন ছোট ভাই।
অবশেষে ঘটনার ১৮ দিন পর নিহতের গলিত লাশ উদ্ধার করেছে সিংগাইর থানা পুলিশ। সেই সাথে হত্যাকান্ডে জড়িত নিহত উজ্জলের স্ত্রী কাঞ্চন ওরফে মনিরা, উজ্জলের আপন ছোট ভাই ঝন্টু ও ছোট ভাইয়ের বন্ধু মাসুদকে গ্রেফতারসহ হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত আলামত উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) দুপুরে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ের এ তথ্য জানান জেলার পুলিশ সুপার মোঃ বশির আহমেদ।
প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার মো.বশির আহমেদ বলেন, জেলার সিংগাইর উপজেলার প্রবাসী উজ্জল মিয়া ও তার আপন ছোট ভাই ঝন্টু মিয়া উভয়েই সিংগাপুর প্রবাসী ছিলেন। সেখানে থাকাকালে আসামী ঝন্টু মোবাইলে তার ভাবী কাঞ্চন ওরফে মনিরার সাথে ফোনে কথা বার্তা বলার একপর্যায়ে পরকিয়ায় জড়িয়ে পড়ে। পরকিয়া সম্পর্কের জের ধরে ঝন্টু তার বড় ভাই উজ্জলকে সিংগাপুরে রেখে বাড়ীতে চলে এসে তার ভাবী কাঞ্চন ওরফে মনিরার সাথে অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত থাকে। ঘটনার ৯ দিন পূর্বে উজ্জল সিংগাপুর হতে বাড়ীতে আসলে ঝন্টু ও কাঞ্চন ওরফে মনিরার অবৈধ পরকিয়ায় বিঘ্ন ঘটতে থাকে। যার প্রেক্ষিতে উল্লেখিত আসামীরা পরষ্পর যোগসাজশে উজ্জল মিয়াকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পূর্ব-পরিকল্পনা মাফিক ১২ অক্টোবর দিবাগত রাত আনুমানিক সাড়ে ১১ টার দিকে আসামী কাঞ্চন ওরফে মনিরা কফির সাথে তার স্বামীকে ঘুমের ঔষধ সেবন করিয়ে অচেতন করে। এরপর আসামী ঝন্টু তার বন্ধু আসামী মাসুদকে ইমুতে কল করে বাড়ীতে ডাকে। মাসুদ আসার পর তিনজনে মিলে উজ্জল মিয়াকে অচেতন অবস্থায় গলায় গামছা প্যাচাইয়া শ্বাসরোধ করে হত্যা নিশ্চিত করে। তৎপরবর্তীতে আসামীরা লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে উজ্জল মিয়ার মৃতদেহ বাঁশের সাথে বেঁধে ঘটনাস্থল ধলেশ্বরী নদীর পাড়ে নিয়ে যায়। অতঃপর, আসামী মাসুদ তার বাড়ী হতে নীল রংয়ের প্লাস্টিকের ড্রাম ও ধারালো হাসুয়া নিয়ে নদীর পাড়ে এসে ড্রামে কাদা মাটি ভরে ড্রামের সাথে রশি দিয়ে উজ্জল মিয়ার মৃতদেহ বেঁধে লাশ নৌকায় উঠিয়ে নদীর দক্ষিণ পাশে নিয়ে হাসুয়া দিয়ে লাশের বুক চিড়ে লাশ নদীর পানিতে ডুবিয়ে গুম করে। এদিকে নিখোজেঁর ১৮ দিন পর গত ৩০ অক্টোবর দুপুরে তালেবপুর ইউনিয়নের কাংশা ব্রীজের পশ্চিম পাশে ধলেশ্বরী নদীর দক্ষিণ পাশে মোহাম্মদ আলীর আবাদি জমি সংলগ্ন নদীতে পানিশূন্য কচুরিপানার মধ্যে মাটিভর্তি প্লাস্টিকের ড্রামের সাথে লাইলনের রশি দিয়ে বাঁধা অবস্থায় গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। এঘটনায় হত্যা মামলা রুজু হওয়ার পর ৬ নভেম্বর উত্তর কাংশা গ্রামে অভিযান পরিচালনা করে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত উজ্জল মিয়ার আপন ছোট ভাই আসামী মোঃ ঝন্টু (২৪),উজ্জলের স্ত্রী আসামী মোসাঃ কাঞ্চন ওরফে মনিরা (২৩), ও আসামী ঝন্টুর বন্ধু মাসুদ(২২)কে গ্রেফতার করে। এসময় হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত একটি হালকা গোলাপী রংয়ের ওড়না , একটি হালকা বেগুনী রংয়ের প্রিন্টের সুতি ওড়না, একগোছা নাইলনের চিকন রশি, একটি চায়র কাপ, নগদ বাংলাদেশী ৮ হাজার ৫শত-টাকা, একটি হাসুয়া, একটি গামছা উদ্ধার পূর্বক জব্দ তালিকা মূলে জব্দ করেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামীরা হত্যাকান্ডের সাথে নিজেদের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। গ্রেফতারকৃত ৩ জনকে আদালতে পাঠানো হয়।