এক সময় রাজবাড়ীতে অনেকেই চুন তৈরির কাজে নিয়োজিত ছিলো। গোটা পাড়ায় প্রায় সবাই চুন বানাতো। গ্রামের নাম করণ হয়ে গিয়েছিলো চুনে পাড়া। সারাদিন এরা শামুক ঝিনুক সংগ্রহ করতে বিভিন্ন পুকুর জলাশয় থেকে তার পর বিশেষ পন্থায় তৈরি করতো চুন। চুন পানের স্বাদ বাড়াতে একটি অপরিহার্য উপকরণ। চুন তৈরির শিল্প আজ বিলুপ্তির পথে।
রসনা বিলাসী মানুষের কাছে পান একটি অতি প্রিয় খাবার। সেই পানের স্বাদ যোগায় চুন। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাবে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে চুন তৈরির কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহৃত শামুক ও ঝিনুক। এছাড়া খাল-বিল, পুকুর মাঠ, নদী-নালায় মৎস্য ও ধান উৎপাদনের জন্য প্রচুর পরিমাণে কীটনাশক ব্যবহারের কারনে শামুক-ঝিনুক কমে যাচ্ছে। অন্য দিকে পাথুড়ে চুনের কারনে তারা দর আর বাজার প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে যাচ্ছে।
পানের স্বাদ বাড়াতে এতে বিভিন্ন ধরনের উপকরণ মেশানো হয়। যেমন- সুপারি, চুনসহ জর্দা ও বিভিন্ন ধরনের মশলা। চুন ছাড়া পান খাওয়ার কোনো মজাই নেই। তবে জানেন কি, এই চুন কীভাবে তৈরি করা হয়? সবচেয়ে ভালো চুন হয় শামুক-ঝিনুকের খোলস থেকে। এই চুনের কদরও অনেক বেশি। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় এই চুন তৈরি করা হয়ে থাকে। শামুক-ঝিনুকের খোল দিয়ে তৈরি চুনের কদর আছে ক্রেতাদের কাছে। তবে চুন তৈরির কাঁচামালের দাম বাড়লেও এ থেকে তৈরি চুনের দাম বাড়েনি। ফলে লোকসানের মুখে পড়ে চুন তৈরির পেশা ছাড়ছেন এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা। চুন তৈরি হয় প্রধান উপাদান হল শামুক ও ঝিনুক। সময়ের সাথে চুন তৈরির কৌশল ও পরিবর্তন হয়েছে।
সরেজমিনে রাজবাড়ী জেলার জামালপুর চুন তৈরির কারখানায় গিয়ে দেখা যায় তারা জানায় প্রথমে ভাটায় (শামুক ও ঝিনুক পোড়ানোর বিশেষ চুলা) কাঠের টুকরা, শামুক ও ঝিনুক পর্যায়ক্রমে সাজিয়ে আগুনে পোড়ানো হয়। এভাবে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা পোড়ানোর পর সেগুলো পুড়ে সাদা রং ধারণ করে। পোড়া শামুক ও ঝিনুকগুলো ভাটা থেকে নামিয়ে চালুনি দিয়ে চেলে নিতে হয়। এরপর চেলে নেয়া ভালো শামুক ও ঝিনুকগুলো গুড়ো করে মাটির চাড়িতে পানির সঙ্গে মিশিয়ে নিতে হয়। বাঁশের হাতা দিয়ে ২০ থেকে ২৫ মিনিট ঘুটলে চুনের সাদা রং বেড়িয়ে আসে। তৈরি হয় পান খাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান চুন।মনতোষ জানান
এভাবে ৫০ কেজি পোড়ানো গুড়ো শামুক ও ঝিনুকের সঙ্গে পানি মিশিয়ে তা থেকে প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ কেজি চুন পাওয়া যায়। ধবধবে সাদা করতে চুনের সঙ্গে বিচিকলার রস মেশাতে হয়। এরপর তা জালের মাধ্যমে ছেঁকে বিভিন্ন হাটবাজারে বিক্রয়ের উপযোগী করা হয়।
চুল শিল্পের কারিগর মালতী বলেন চুন তৈরির কাজ আমাদের জাত পেশা। কিন্তু বর্তমানে খাল-বিল, নদী-নালায় পর্যাপ্ত পরিমাণ শামুক ও ঝিনুক না পাওয়ায় অতিরিক্ত দামে তা সংগ্রহ করতে হচ্ছে। অতীতে বস্তাপ্রতি শামুক ও ঝিনুক ৭০ টাকা দরে কিনলেও বর্তমানে প্রতিবস্তা শামুক ও ঝিনুক ৪শ থেকে ৫শ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে। ফলে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। চুনের বর্তমান বাজার দর প্রতি মণ (৪০ কেজি) ১ ৭শ টাকা। কিন্তু শামুক ও ঝিনুক পোড়ানোসহ বিভিন্ন খরচ বাদ দিয়ে যে লাভ হয় তাতে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ছে। তাই ক্ষতি সামলাতে অনেকে এ পেশা বদল করে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে বাধ্য হয়ে।